বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা টমেটো চাষি। একপ্রকার মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে থাকা টমেটো বাজারের দাম ইচ্ছে-খুশিমতো ওঠানামা করছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজার হাজার টমেটো চাষি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের বাজার মনিটরিং শক্তিশালী করা হলে এবং সরকারিভাবে টমেটোসহ সব কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে তা প্রত্যেক বাজার ও আড়তে দৃশ্যমানের ব্যবস্থা করা হলে কৃষক ন্যায্য দাম পাবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে চিতলমারীর টমেটো চাষির জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বাম্পার ফলন ফলিয়েও তারা তাদের আসল দাম ঘরে তুলতে পারছেন না বলে জানান।
শ্যামপাড়া গ্রামের চাষি প্রকাশ মজুমদার, দুর্গাপুর গ্রামের লিটন সোমসহ অনেকে জানান, তাদের টমেটো চাষে যে টাকা খরচ গেছে, হঠাৎ করে বাজারের দরপতন হওয়ায় আসল টাকাই উঠবে না। এখন দিশেহারা অবস্থা। দেনাগ্রস্ত হয়ে এই টমেটো চাষ করেও এখন দেনার ভার আরও বেড়ে গেছে।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় উৎপাদিত টমেটো ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে প্রায় পাঁচ-ছয় গুন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ন্যায্যদাম হতে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। প্রতিদিন চিতলমারী হতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গড়ে প্রায় দুই কোটি টাকার টমেটো যায়। প্রতিকেজি টমেটো কৃষকের কাছ হতে দুই থেকে তিন টাকা দরে কিনে তা শহরাঞ্চলে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। এদিকে গ্রামে প্রতিদিন কমছে টমেটোর দাম। চিতলমারীতে শত শত হেক্টর ক্ষেতের টেমেটো পেঁকে পেঁকে বিনষ্ট হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে টমেটো উৎপাদনকারী প্রায় ১৯ হাজার চাষি ও তাদের পরিবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। টমেটো সংরক্ষণ বা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় পাইকারী ক্রেতাদের প্রতিমুহুর্তে পরিবর্তিত মৌখিক বাজারদরেই চাষিরা টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অপরদিকে স্থানীয় পাইকাররা জানান, ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়ালে তাদের কিছুই করার থাকে না। এতে চিতলমারীর টমেটো চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। এ অবস্থায় কৃষকের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।
গত শুক্রবার চিতলমারীর বিভিন্ন মাঠ ও বাজার সরেজমিনে গিয়ে টমেটো চাষি, স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ নানা পর্যায়ে আলাপকালে জানা যায়, সরকারি কোন মূল্য তালিকা এলাকার টমেটো ব্যবসায়ীদের দোকান কিংবা আড়তে দৃশ্যমান নেই। যা ভোক্তা অধিকার আইনকে লঙ্ঘিত করে। এছাড়া, সরকারের ‘জাতীয় কৃষি বিপনণ নীতি ‘কৃষিপণ্যের সর্বনিন্ম ও সর্বোচ্চ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের কথা লিখিতভাবে থাকলেও তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ মূল্য তালিকা দৃশ্যমান থাকলে এবং সরকারি মনিটরিং থাকলে হাজার হাজার টমেটো চাষি তাদের ন্যায্যতা পেতেন। তাই এই বিষয়ে দ্রুত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রার্থনা করেন ভুক্তভোগীরা।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল জানান, টমেটো উৎপাদনকারী কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেই বিষয়ে যথাযথ দপ্তর ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্যতালিকা আগে থেকেই দৃশ্যমান থাকা উচিৎ। কেউ কৃষকদের ঠকিয়ে টমেটো বাজারের ফায়দা নিচ্ছে কি-না তাও দেখা দরকার।
কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দায়িত্বে থাকা বাগেরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুমন হুসাইন জানান, টমেটোর চাহিদা যদি না থাকে তাহলে বাজারদর তো কমেই যাবে। এক্ষেত্রে কী-ই বা করার আছে! ‘জাতীয় কৃষি বিপণন নীতি অনুযায়ী চিতলমারীতে উৎপাদিত এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন সরবরাহকৃত ‘কৃষিপণ্যের সর্বনিন্ম ও সর্বোচ্চ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ’ করে দৃশ্যমান করা হয়েছে? এছাড়াও, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকদের দামে ঠকাচ্ছে কি-না সেই বিষয়ে কোন মনিটরিং বা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দেননি।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সিফাত-আল-মারুফ জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর টমেটোর উৎপাদন ও চাষাবাদের পরিধি বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৯ হাজার টমেটো চাষি রয়েছেন। চলতি বছর ৮৩৯ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষাবাদ হয়। হঠাৎ করেই টমেটোর বাজারদর কমে যাচ্ছে।
ফলে ১৯ হাজার টমেটো চাষিসহ তার পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে যারা লাভবান করছেন এবং প্রতিদিন যারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন সেই কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় তারা সরব রয়েছেন বলে জানান।
টিএইচ